ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার

ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার জানতে চান? কোভিড আক্রান্তদের শরীরে দেখা মিলছে ফাঙ্গাস নামক একপ্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ। বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে এই সংক্রমণে ভুগছে। ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে চিকিৎসকরা বলেছে এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার
ভারত যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখনই এই ফাঙ্গাস রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং অনেকের প্রাণহানির পাশাপাশি এই সংক্রমণের হারও পরিমাণও দিন দিন দ্রুততার সাথে বাড়ছে। তার মধ্যে বাংলাদেশেও এই ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে গরমের তীব্রতা বেড়ে যায় অতীতের তুলনায় দ্বিগুণ। আমরা তীব্র তাপদাহ এর মাঝে হঠাৎ করে বৃষ্টির মধ্যে একটি ভ্যাপসা গরমের মধ্যে পার করছি। ঠিক এই সময়েই ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জনিত রোগ দেখা যায়। সারা বছরের তুলনায় এমন আবহাওয়াতে এই ধরনের সংক্রমণ দেখা মেলে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এই ফাংগাস নামক সংক্রমনের বিস্তার ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে।

ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার

ফাঙ্গাস হচ্ছে এক ধরনের ছত্রাক জনিত রোগ। যা বিরল ফাংগাল সংক্রমণ নামে পরিচিত। মানবদেহে এর সংক্রমণ দেখা দিলে ৫৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে কোভিড ১৯ সংক্রমণ থেকে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এমতবস্থায়, এই ছত্রাক জনিত সংক্রমণ শরীরে আক্রমণ করে। যাদের বেশি পরিমাণে ডায়াবেটিস রয়েছে এবং আইসিইউতে রেখে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের শরীরে দিন দিন এমন সংক্রমণ বেশি দেখা দিচ্ছে।

ফাঙ্গাসের সংক্রমণ যত তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা হবে তত তাড়াতাড়ি এর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। পরিবেশের সাথে মিউকর ছত্রাকের প্রতিস্থাপন খুব ভালোভাবে আছে এবং এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই জন্য এর প্রতিকারের জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে সুস্থ সবল থাকা এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করা। বিশেষ করে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে জাতীয়ভাবে ভাঙ্গা সংক্রমণ রোগীদের পর্যবেক্ষণ করতে অণুজীব বিজ্ঞানীদের এবং চিকিৎসকের উপস্থিতি প্রস্তুত নেয়া দরকার আছে।

প্রতিটি জায়গায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অক্সিজেনের মজুদ বা অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং এর সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের দিকে বেশ নজরদারি করতে হবে। যাতে করে অক্সিজেন সরবরাহের সময় ফুসফুসে ফাঙ্গাসের সংক্রমণে কোনোরকম সুযোগ যেন না থাকে।

ফাঙ্গাস রোগের লক্ষণ কি

ফাঙ্গাস রোগের লক্ষণ কি এ নিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগীরা যখন অতিরিক্ত  ওষুধ নিয়ে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলছেন তাদের মধ্যে এই ছাত্রকে আক্রান্ত হওয়া খুবই বেশি। ফাঙ্গাস সংক্রমণের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানান। চলুন এক নজরে দেখে নেই ফাঙ্গাস রোগের লক্ষণ কি কি-

  • লোক ত্বকে কালো দাগ দেখা যায়।
  • ঘাড়ে ব্যথা ও দাঁতে ব্যথা শুরু হয়।
  • রক্তে বমি হয় ও কফের সঙ্গে রক্ত যায়।
  • মুখের একদিকে কারো কারো ফুলে যায়।
  • দাঁতের মাড়ি বা না কালো হয়ে যায়।
  • দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
  • সংক্রমণ রোগী চোখে ঝাপসা দেখে।
  • নাকে ঘা হয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
  • আক্রান্ত রোগীর নাক বন্ধ হয়ে যায়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন আসলে কী

সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে মানবদেহে থাকা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস এই ইনফেকশনগুলো শুরু হয়ে থাকে এবং সে জন্যই কোভিডের পরে এর প্রবণতা বেশি হয়। প্রেগনেন্সি এবং ফ্র্যাকচার ছাড়া যে কোন সব কিছুই করোনার লক্ষণ হতে পারে হার্ট বা মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে মানসিক রোধ পর্যন্ত কোন কিছুই এর বিপরীতে নয়। চিকিৎসকরা জানান যে মুখ চামড়া, রক্ত এবং নাকসহ মানব দেহে বিভিন্ন জায়গায় ফাঙ্গাস ইনফেকশন হতে পারে এবং সাধারণত এটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। এমতবস্থায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন আসলে কী সেটি জানা যায়।

কীভাবে ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হয়

এই ছাত্ররা পরিবেশের সাথে সব সময় থেকে থাকে। আমাদের মানবদেহে সবসময়ই থাকে। কিন্তু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে একটি রোগ হিসেবে দেখা যায়। বিশেষ করে যারা বেশি সময় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল এবং ডায়াবেটিস অনিন্দিত তাদের ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যেমন চামড়া মুখ রক্ত নকসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাঙ্গাস ইনফেকশন হয়ে থাকে এবং এটি সাধারণত রক্ত পরীক্ষা মাধ্যমে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

আরো পড়ুনঃ গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবেন কিভাবে - ত্বকের ঘরোয়া যত্ন

কিভাবে পাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা জানিয়েছে, যাদের ডায়াবেটিস অনেক বেশি, ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভার সিরোসিস এবং এইডস এর মত রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি বেশ ভয়ানক হয়। শুধুমাত্র করোনা রোগীদের এই রোগ দেখা যায় না। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন যাবত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল তাদের ক্ষেত্রে রক্ত বেশি দেখা যায়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিভাবে শনাক্ত করা হয়

কোন ব্যক্তি এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা জানতে মাইক্রোস্কোপের স্লাইটে পরীক্ষা করে কিংবা এর কালচার করে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে সিটি স্ক্যান করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কিভাবে সনাক্ত করা হয় সেটি নির্বাচন করা যায়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সনাক্ত করতে হলে আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা নেওয়া প্রয়োজন হয়। এই নমুনা নেয়ার পর মাইক্রোস্কোপের নিচে স্লাইড তৈরি করে দেখা হয়। অন্য আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে সেটি হচ্ছে কালচার করতে হবে।

কালচার করতে মোটামুটি দুই দিনের মতো অপেক্ষা করতে হয়। আবার ইনফেকশন হলে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে বোঝা যায় কিন্তু ফাঙ্গাস ইয়োলো, ব্ল্যাক নাকি হোয়াইট সেটি বুঝতে হলে অবশ্যই মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কালচার করা যায় কিন্তু কালচার করার সাথে সাথে স্যাম্পল নিয়ে আবার মাইক্রোস্কোপে দেখতে হয়।

কিভাবে ভয়ঙ্কর ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায়

ছত্রাক বা ফাঙ্গাস পরিবেশে বিশেষ করে পচে যাওয়া জৈব পদার্থের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যেমন পচা ফল পাতা বা পশুর বিষ্ঠা। ময়লার মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস এর জীবাণু প্রাকৃতিকভাবে থাকে। এজন্য এসব থেকে বেঁচে থাকতে হলে সর্বদা বা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত। পরিষ্কার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে তবে একই মাস্ক বেশি দিন ব্যবহার করা যাবে না। শরীরকে সব সময় নিস্তেজ রাখতে হবে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। তারপর বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

পুষ্টিকরযুক্ত খাবার যেমন ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে। ব্লাড সুগার বা ডাইবেটিস লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বাসার বাইরে বের হলে জুতার সঙ্গে মোজা ব্যবহার করা উচিত। যেই স্থানে অনেক ধুলাবালির ছড়িয়ে আছে এমন জায়গা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে খালি পায়ে করা যাবে না। ভেজা বা কাদাযুক্ত আছে এমন জায়গায় সংস্পর্শে আসা যাবেনা। বাড়ির চারপাশে প্রতি সপ্তাহে ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গ্রাম্য পরিবেশে কৃষকরা প্রতিদিনই বাগানের কাজ করে থাকেন।

এমতবস্থায়, জুতা, ফুল হাতা শার্ট-প্যান্ট পরিধান করতে হবে এমনকি গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। মানব দেহের ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার থেকে রক্ষা করতে হলে পচা মাটি বা ধূলিকণার সংস্পর্শে গেলে সাবান ও ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে। সুতরাং কিভাবে ভয়ংকর ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় তা উপরোক্ত বিষয় থেকে সতর্ক থাকলে কিভাবে ভয়ঙ্কর ছত্রাক থেকে দূরে থাকা যায় তা মেনে চলতে পারব এবং এই ভয়ঙ্কর ছত্রাক থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হতে পারবো।

উপসংহার

শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হলে অন্যান্য অঙ্গের মত ত্বকের সুরক্ষার জন্য আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে। এই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াতে আমাদের উচিত ফাঙ্গাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার জন্য অতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা গড়ে তোলা অত্যান্ত জরুরি। তাহলে এই ফাঙ্গাস নামক ছত্রাক থেকে আমরা রেহাই পাব।

আশা করছি,এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও জানতে সক্ষম হয়েছেন। ফাঙ্গাস রোগ কি - ফাঙ্গাস রোগের প্রতিকার নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url