করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়

সম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি, আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকের পোষ্টে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়? এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকের পোষ্টে করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়? সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি।
করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়

এছাড়াও এই ব্লগে আমরা করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান, করোসল ফল কি ক্যান্সার প্রতিরোধী?, করোসল ফল কীভাবে কাজ করে?বাংলাদেশে করোসল ফলের গুরুত্ব কেমন? এসকল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনি যদি করোসল ফলের এগুলো বিষয় সম্পর্কে জেনে না থাকেন, তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

উপস্থাপনা

আমরা প্রায় অনেকেই জানি যে করোসল ফল অনেকের কাছে ক্যান্সার প্রতিরোধী ফল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু, আমাদের বাংলাদেশে এটি অপরিচিত ফল। তবে বর্তমানে করোসল ফলের বেশ ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৫ সালে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাকর্মকর্তা নীলফামারীতে এই ফলের প্রথম চাষ শুরু করা হয়।

এই বিশেষ ঔষধি গুণসম্পন্ন ফলটি তিনি ২ একর জমিতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে বেশ ভালো লাভবান হয়েছেন। এই ফলটিকে ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং প্রাকৃতিক কেমোথেরাপি বলা হয়। তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। প্রথমে আমরা করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান সংক্ষেপে জেন নিব।

করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান

ক্যন্সার প্রতিরোধী করোসল ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম করোসলে যে পরিমাণ পুষ্টিগুন বা উপাদান থাকে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • চর্বি (০.২ গ্রাম)
  • প্রোটিন (০.৮ গ্রাম)
  • ফাইবার (১.৯ গ্রাম)
  • এনার্জি (৬২ ক‍্যালরি)
  • ক‍্যালসিয়াম (৪০ মিলিগ্রাম)
  • ম‍্যাগনেসিয়াম (২৩ মিলিগ্রাম)
  • কার্বোহাইড্রেট (১৫.৭ গ্রাম)
  • ভিটামিন সি (১৯.২ মিলিগ্রাম)
  • ফলিক এসিড (১৪ এমসিজি)
  • ফসফরাস (১৯ মিলিগ্রাম)
  • পটাশিয়াম (২৫০ মিলিগ্রাম)
উপরোক্ত উল্লিখিত পুষ্টি উপাদান ছাড়াও অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের মধ্যে অনেকেই করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়? এটি জানতে চাই। চলুন তাহলে সেই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ফলের এতটাই গুণ, এই ফল খেলে ক্যানসার রোগীর থেরাপির প্রয়োজন হয় না। শরীরও চাঙ্গা থাকে, দুর্বল ভাব আসে না। মূলত, আমাজন নদীর উপত্যকা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে করোসল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।

এছাড়া চিন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, এইসব দেশেও করোসল জন্মায়। এখন বাংলাদেশে এই ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। ব্রাজিলের এক প্রত্যক্ষ গ্রামে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে পরিচিত করোসল ফলের গাছ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়ে থাকে। করোসল ফল চাষ সেখানকার কৃষকদের নতুন আয়ের দিশা দেখাচ্ছে।

করোসল ফল বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায়?

করোসল হচ্ছে একটি বিদেশি ফল। আমাদের বাংলাদেশে এ ফলের গাছ আগে তেমন একটা দেখা যেত না। তবে বর্তমানে এই ফলের জন্য জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কেননা বেশিরভাগ ক্যান্সারের চিকিৎসাই এ ফলটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হচ্ছে ক্যন্সারের চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত এই অসাধারণ ঔষধি গাছ।

বিভিন্ন সূত্রেপাতের তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, বাংলাদেশের রাজশাহী, নীলফামারি, সাতক্ষীরা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ ও বরগুনাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে করোসল গাছের চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর ও নীলফামাড়ির খড়িবাড়ি গ্রামের ফলন শুরু হয়েছে এই গাছের। এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বিভিন্ন দেশ পর্যবেক্ষণ করে চারা সংগ্রহ করে তার বাগানে এই করোসল গাছ লাগান।

রাজশাহীর পণ্য নামে একটি ফেসবুক পেজে করোসল গাছের কলম বিক্রি হয়। আপনারা সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনেও এই ফলের সন্ধান পেয়ে যাবেন। অনলাইনের মাধ্যমে নেওয়ার সুবিধা হচ্ছে আপনি দেশের যেকোনো স্থান থেকে করোসল গাছের চারা, ফল ও পাতা সংগ্রহ করতে পারবেন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন, করোসল ফলের দাম জেনে নেই।

করোসল ফলের দাম কত?

করোসল ফলের উপকারিতা অনেক। পাশাপাশি এই ফলটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যার ফলে এর দামও অনেক বেশি। এই ফল চাষাবাদের জন্য নির্দিষ্ট আবহাওয়া প্রয়োজন পড়ে। তাই এই ফল চাষ করা বেশ কঠিন। আবার চাষাবাদ কম হওয়ার জন্যে এর দাম অনেক বেশি। করোসল ফলের দাম প্রতি কেজি ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা (কমবেশী হতে পারে)।

এছাড়াও করোসল ফলের চারা পাওয়া যায়। অনেকেই এই ফল চাষ করতে চান তারা রাজশাহীর পণ্য নামের একটি ফেসবুক পেজে রাজশাহী থেকে করোসল গাছের কলম বিক্রি করেন। আপনি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থান থেকে মাত্র ৬০০ টাকায় করোসল গাছের কলম সংগ্রহ করা যাচ্ছে। আশা করছি, করোসল ফল ও কলমের দাম জানতে পেরেছেন।

করোসল ফল কি ক্যান্সার প্রতিরোধী?

করোসল ফল কি ক্যান্সার প্রতিরোধী? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের মধ্যে অনেকেই গুগলের কাছে জানতে চায়। এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে হ্যা, এই করোসল ফল অন্যেন্য রোগের উপকারি হলেও এটি বেশির দেশে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেই পরিচিত। আশা করছি, আপনার প্রশ্নের উত্তরটি জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, করোসল ফল কীভাবে কাজ করে সেটি জেনে নেই।

করোসল ফল কীভাবে কাজ করে?

করোসলের কয়েকটি কচি পাতা ফলে ভালোভাবে কুচি করে কেটে চায়ের সাথে পান করা যায়। আবার আস্তপাতা পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়েও খাওয়া যায়। পাকা ফল ঠাণ্ডা পানিতে শরবত বা জুস করে খেতে পারেন। আবার অনেকে কাঁচাও খেয়ে থাকে। এই ফলটি দেখতে অনেকটা কাঠালের মতো হলেও এর রং সবুজ হয়।

করোসল গাছে রয়েছে, অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্টোজেনিন (Annunaceous astogenin) নামে এক ধরনের যৌগ। এই যৌগ ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি থামিয়ে দেয়, যার ফলে কেমোথেরাপি করে। এই ফল কেমোথেরাপির চেয়ে ১০ হাজার গুণ শক্তিশাল এজন্য ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি হতে পারে না। এছাড়া আপনি যদি নিয়মিত এই ফল খেতে পারেন, তাহলে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বেড়ে যাবে। রক্তকে শোধিত করতেও এই ফলের গুণ অপরসীম

করোসল কিভাবে খাবেন?

করোসল ফল খেতে অন্যান্য ঔষধি ফলের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত। আর ওষধি ফলগুলো খেতে সাধারনত তীব্র গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। এই ফলে বাইরের কাঁটাযুক্ত আংশ খাওয়া যায় না। ফলের চামড়াগুলো তুলে ফেলে এর অভ্যন্তরীন অংশ খাওয়া যায়। প্রচলিত তরমুজ ফলের মতো বীচি ফেলে দিয়ে খেতে হয়।

করোসল ফল পানীয় হিসেবে ফ্রিজিং করে নিয়মিত খাওয়া যায়। এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোতে ডেজার্ট তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। এই ফলের বীচিতে বিষাক্ত যৌগ থাকে এজন্য খাওয়া যায় না তাই এটি অপসারণ করা উত্তম। এছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন-
  • আপনি যদি এই ফল পাকা অবস্থায় খেতে পারেন তাহলে বেশী ভালো হয়।
  • পাকা করোসল ফল ভালো ভাবে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে সবুজ খোসা ছাড়িয়ে এবং এর বীচিগুলো ফেলে দিয়ে সরাসরি খাওয়া যায়।
  • আবার এটি জুস বা শরবত বানিয়ে খেতে পারবেন। একটি ফল নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে এবং বীজগুলো বাদ দিয়ে টুকরো টুকরো করুন। এরপর কাটা ফলগুলো পিষে বা ব্লেন্ড করে পরিমানমতো চিনি এবং পানি ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন।
  • এছাড়াও সালাদ বানিয়েও এটি খেতে পারেন।

বাংলাদেশে করোসল ফলের গুরুত্ব কেমন?

করোসল ফল সেভাবে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে চাষাবাদ করা না হলেও চাহিদা মোতাবেক দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদ করে বেশ ভালো ফলন হচ্ছে। তবে বাগানভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশে করোসল ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এর ক্যান্সার প্রতিরোধী ঔষধি গুণের দরুণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন সিন্ডিকেট এর কারণে প্রতি পিচ চারার মূল্য প্রায় ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখছে। আর প্রতি ২৫০ গ্রাম ফলের দাম প্রায় ৪৫০০ পর্যন্ত। তাই বর্তমানে এই ফল বাংলাদেশে বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে।

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়

পরিশেষে এ কথা বলে শেষ করব যে, আপনি যদি নিয়মিত করোসল ফল খেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। আমি ইতিমধ্যে করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়সহ আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি, আপনারা জেনে উপকৃত হয়েছেন।

প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো এতক্ষণে করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায় জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি সম্পূর্ণ পোষ্টের কোনো অংশ বুঝতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন। তাহলে, আমরা আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

করোসল ফলের দাম কত - করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায় সম্পর্কে আমাদের আজকের ব্লগটি আপনার ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের শেয়ার করবেন। এতে তারাও উল্লিখিত বিষয়গুলো জানেন না তারাও এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যগুলো জানতে পারবেন। এরকম স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কিত টিপস পেতে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পোষ্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url