ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে  আলোচনা করব সেটি হচ্ছে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম। এর পাশাপাশি ইসবগুলের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করি,ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম আলোচিত পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
আপনি যদি আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে, ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

আমাদের বাংলাদেশের ইসবগুলের ভুষি অনেক পরিচিত। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই খাদ্যটি পুরো উপমহাদেশে বেশ পরিচিত উপকারী খাদ্য। আমরা অনেকেই ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনে থাকলেও একটি উপকারী খাদ্য হিসেবে রমজান মাসে বেশিরভাগ খেয়ে থাকি। কারণ ইফতারের সময় এসব গুলোর ভুসি খেলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও এটি বেশ উপকারী।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের মানবদেহে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে এটি বিশেষভাবে কাজ করে। এজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই ইসবগুলের ভুষির উপকারিতা ও অপকারিতা ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া অতীব জরুরী।

ইসবগুলের ভুসি কি

ইসবগুলের ভুসি হচ্ছে এক ধরনের দ্রবণীয় ফাইবার যা আমরা মূলত সাইলিয়াম বীজের খোসা থেকে পেয়ে থাকি। একটি রেচক বা ল্যাক্সেটিভ (laxative) হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসবগুলের ভুষি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ, অগ্ন্যাশয় এবং হার্ট বা হৃদপিণ্ড সুস্থ সবল রাখতে এটি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।

ইসবগুলের ভুসিতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে

ইসুবগুলের ভুসিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির উপাদান রয়েছে। যেমন এক টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসিতে থাকে-
  • ০% ফ্যাট
  • ১৫ গ্রাম শর্করা
  • ৫৩% ক্যালোরি
  • ১৫ গ্রাম শর্করা
  • ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
  • ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
  • ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন

ইসবগুলের ভুসি কেন খাবেন

মানবদেহের পেট পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের চেয়ে ইসবগুলের ভুষি অনেক কার্যকর। আমরা জানি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অশ্বরোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি অশ্বরোগ ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও রূপান্তর হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুষি বেশ উপকারী। ওষুধ মানবদেহের পেটকে কেমিক্যালাইস করে থাকে কিন্তু ইসবগুলের ভুষি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে ইসবগুলের ভুসি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
ইসবগুল আমাশয় জীবাণুগুলোকে পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস করতে পারে না তবে সেই জীবাণুকে বের করে দিতে অনেক সাহায্য করে। এজন্য যারা আমাশয় রোগী রয়েছেন তারা যদি সকালে এবং রাতে এক গ্লাস ইসবগুলের ভুসির শরবত খায় তাহলে অনেক উপকার পাবে।

যে সকল ব্যক্তিদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া রয়েছে তারা সকাল এবং বিকালে শরবত হিসেবে ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া অনেকটা কমে যাবে এবং ইউরিন এর কালার স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে। তাছাড়াও মাথা ঘোরানো ও পায়ে হাতে জ্বালা পোড়া যাদের রয়েছে তারা যদি আখের গুড়ের সঙ্গে সব মিলিয়ে নিয়মিত সকল-বিকাল খেলে অনেকটাই উপকারে আসবে।

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা

ইসবগুলের ভুষির অনেক উপকারিতা হয়েছে। আমরা অনেকেই উপকারী খাদ্য হিসেবে ইসবগুলের ভুষি খাদ্য তালিকায় রাখিনা। এটি আমাদের মানব দেহকে সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করে। এসব গুলোর ভুসি কি কি বিষয়ে উপকারে আসে চলুন দেখে নেয়া যাক-

গ্যাস্ট্রিকের দূরীকরণে: বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সবচেয়ে অন্যতম কারণ হচ্ছে তৈলাক্ত জাতীয় খাদ্য খাওয়া। এটি সাধারণত হজম শক্তি স্বাভাবিক রাখার জন্য পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণ করতে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটি দূর করতে হলে এক গ্লাস পরিমাণ মতো ঠান্ডা দুধে দুই চা চামচ সবগুলো ভুষি মিশিয়ে খাবেন। নিয়মিত এভাবে খেলে দেখবেন একটি পর্যায়ে যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে: কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক জটিল একটি রোগ। এই সমস্যাকে স্বাভাবিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কেননা, মানব দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে শরীরের বিভিন্ন স্তরে স্বাভাবিক নানা ক্রিয়াগুলো বাধাগ্রস্থ হয়। যার ফলে শরীরে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

এজন্য এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এটি প্রথম অবস্থায় আকস্থলীতে অবস্থান করে এরপরে সেটি ফুলে ভিতরের সব বজ্র পদার্থকে বের করে দেয়। এজন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে দুই চা চামচ এসব ভুসি খাবেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য সহজেই দূর হয়ে যাবে।

হার্ট ভালো রাখে: ইসবগুলের ভুষি হার্টের জন্য বেশ উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার ফলে একজন ব্যক্তির হৃদরোগে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও লিপিদের মাত্রা উন্নত, রক্তচাপ হ্রাস এবং হার্টের বেশি শক্তিশালী করে আপনার হাতকে প্রভাবিত করে। ভালো রাখতে সাহায্য করে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে: আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যারা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার  সমস্যায় ভোগেন। তাদের জন্য ইসবগুলের ভুষি একটি উপকারী খাবার। এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে হলে আপনাকে আখের গুড়ের সাথে এসব গুলোর ভুসি মিশিয়ে খেতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত সকাল ও বিকালে খেতে পারে তাহলে আপনার প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অনেকটাই নিরাময় হবে এবং প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ডায়রিয়া প্রতিরোধকরনে: ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়া প্রতিরোধে বেশ ভূমিকা পালন করে। জুবগুলের ভুসি দইয়ের সাথে খেলে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডায়রিয়া হলে ভরা পেটে দিনে দুইবার তিন টেবিল চামচ দই ও দুই চা চামচ ইসবগুলের ভুসির সাথে মিশিয়ে খাবেন। তাহলে ডায়রিয়া থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।

ইসবগুলের ভুসির অপকারিতা

ইসবগুলের ভুসিতে উপকারিতা থাকার পাশাপাশি এর কয়েকটি অপকারিতাও রয়েছে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী এর উপকারিতা জানার পাশাপাশি আমাদেরকে অপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া জরুরী। আপনি যদি, প্রথম অবস্থায় ইসবগুলির ভুসি খান বা যতোটুকু খাওয়া প্রয়োজন এর বেশি পরিমাণে হিসাবগুলোর ঠিক খেয়ে থাকেন তবে আপনার বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন-
  • পেটে ব্যথা হওয়া।
  • ক্র্যাম্প সৃষ্টি হওয়া।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
  • ডায়রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
  • বমি বমি ভাব হয়।
  • হারাকনো ভাব সৃষ্টি হয়।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়।
আপনি যদি ইসবগুলের ভুষি খাওয়ার পরে এলার্জির মত অনুভব করেন তাহলে আপনাকে যথাসম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও এসব গুলো ভুষির কিছু বিরল ঝুঁকি রয়েছে সেগুলি হচ্ছে-
  • প্রথমত বমি বমি ভাব।
  • শ্বাসকার্যের সমস্যা সৃষ্টি হওয়া।
  • চুলকানি হওয়া ও চামড়ার মধ্যে লাল লাল ফুসকুড়ি দেখা দিবে।
  • বিশেষ করে গলা এবং মুখ ফুলে যেতে পারে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি সেটি হচ্ছে, প্রাথমিকভাবে রাতে দুইবা তিন চামচ ইসবগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখি এবং সকালবেলা সেটি শরবত তৈরি করি। মূলত এসব ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এবং লেবুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা গুলো থেকে রেহাই পাবেন।

তাছাড়া আপনি যদি ইসুবগুলের ভুসি রাতে দুধের সাথে মিশিয়ে খান তাহলে আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারিতাগুলো কার্যকর হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন যে ডায়াবেটিস রোগীদের দয়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুষি কখনোই খাওয়া যাবে না এর প্রধান কারণ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিদিন কতটুকু ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত

সাধারণত ইসবগুলের ভুষি খাওয়া কারণে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় না। আপনি প্রতিদিন ইসবগুলের ভুষি ১ টেবিল চামচ করে সর্বোচ্চ ৩ বার খেতে পারবেন। তবে ইসবগুলের ভুসি পানির সাথে মিশে খাওয়া উত্তম। সারাদিনে তিনবার ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পাশাপাশি বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

ইসবগুলের ভুষি এমন এক খাদ্য উপাদান খাদ্য তালিকায় এর পরিমাণ বেশি খাওয়া যাবে না কিন্তু আপনি দিনে ৩ বার খাবেন কিন্তু নিয়মিত খাবেন আশা করি, প্রতিদিন কতটুকু হিসাব ভুল হয়ে ভুসি খাওয়া উচিত তা বুঝতে পেরেছেন।

খালি পেটে ইসবগুলের ভুষি খেলে কি হয়

আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা দীর্ঘদিন যাবত পেটের সমস্যায় ভুগছেন। মূলত যারা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে ভুগছেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লজ্জা কারণে এই সমস্যাটি প্রকাশ করতে চাই না। যার ফলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যায়।

আপনি যদি খালি পেটে এসব ভুসি খান তাহলে আপনি এই সমস্যা থেকে রেহাই পাবে। তবে খেয়াল রাখবেন বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না। কারণ পানিতে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে সেটিকে পানি শুষে নেই কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যায়।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি, ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং ইসবগুলের অন্যান্য বিষয়  সম্পর্কে এই পুরো আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা ও অপকারিতা - ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এই বিষয় নিয়ে আমাদের লেখা আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url