কোরবানি অর্থ কি - কোরবানির ফজিলত, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসয়ালা

কোরবানি অর্থ কি - তা জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী। মুসলিম হিসেবে কোরবানী অর্থ কি, কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক ভাবে জানতে না পারলে কোরবানি করতে গিয়ে বা করা আমাদের জন্য সমস্যা হতে পারে। তাই কোরবানি অর্থ কি এবং এর ফজিলতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়। আজকের আর্টিকেলটিতে কোরবানির সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কোরবানি অর্থ কি - কোরবানির ফজিলত, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসয়ালা
তাই কোরবানি অর্থ কি তা জানার জন্য আর্টিকেলটি সম্পন্ন করুন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কোরবানির সঠিক অর্থ কি। তাহলে কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক কোরবানি অর্থ কি। 
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

আত্মার সংশোধন এবং তাকওয়া অর্জন কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। মানুষের মনের গহীনে থাকা আল্লাহর প্রতি অসীম প্রেম ভালবাসার নজরানা পেশ করা হয় কোরবানির মাধ্যমে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায়কৃত কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় কি-না তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান মুসলমানের কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব।

কোরবানি অর্থ কি

ভাষাতাত্ত্বিকরা দাবি করেন, হিব্রু শব্দ কোরবান থেকে এসেছে কোরবানি। অনেকে বলে থাকেন সিরিয়ালা ভাষার 'কুরবানা' শব্দের সাথে কুরবানির যোগ রয়েছে। পরবর্তীতে এটি আরবি ভাষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আরবি ভাষায় এর অর্থ 'কারো নিকটবর্তী হওয়া'।
এই উৎসবে পশু কোরবান করার প্রথা রয়েছে তাই আরেক অর্থে কোরবানির শব্দের অর্থ ত্যাগ এবং নৈকট্য লাভ।কুরবানী মুসলিম মিল্লাতের দ্বিতীয় প্রধান উৎসব।পরিভাষায় কোরবানি হচ্ছে, জিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকাল হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।

কোরবানির উদ্দেশ্য

মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। তাই আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। কুরবানী উৎসব হিসেবে পরিচিত নয়, বরং এটি একটি ইবাদত। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহকে খুশি করা এবং তাকওয়া অর্জন করা। মুসলমানগন আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের জন্য এই কোরবানী করে থাকে।

কোরবানির মূল শিক্ষা আত্মার সংশোধন এবং তাকওয়া অর্জন। বাহ্যিকভাবে কখনোই কোরবানিদাতার মনের অবস্থা জানা সম্ভব নয়। এটি যার যার মনের বিষয়। বলা হয়ে থাকে, একজন মানুষের যদি অন্তর বিশুদ্ধ হয় তবে তার সম্পূর্ণ শরীর বিশুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে বান্দার পরিচয় তার অন্তর। কার অন্তর কতটা স্বচ্ছ ও সুন্দর তা পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় হলো কোরবানী।
কোরবানির আরেকটা শিক্ষা হল একা একা নয় সকলের সাথে মিলে মিশে ঈদ পালন করা। ঈদের আনন্দ সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া। গরীব, মুসকান, ফকির অবসাদগ্রস্তদের বাদ দিয়ে কোরবানীর আনন্দ পূর্ণতা পায় না। ঠিক সেভাবেই কোরবানির আনন্দ সম্পূর্ণ পূর্ণ হয় না আত্মীয় স্বজনদের ছাড়া। কোরবানির গোশত সম্পূর্ণ নিজে ভোগ করা উচিত নয় আত্মীয়-স্বজনদেরকে দিয়ে তারপর খেতে হবে।

আবার কোরবানির অর্থ এটাও না যে নিজের পরিবারের লোকজনকে বঞ্চিত করা। আমাদের উচিত পশু কোরবানির সাথে সাথে নিজের পাশবিক চরিত্রকেও কোরবানি দেওয়া। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কোরবানির শিক্ষাকে কাজের লাগিয়ে ত্যাগ এবং তিতিক্ষার মাধ্যমে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা।

কোরবানি কি সুন্নত, ফরজ নাকি ওয়াজিব 

প্রথমত কোরবানি হচ্ছে ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি প্রমুখের মতামত এটাই। ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি একটি মত বর্ণিত আছে যে তিনিও ওয়াজিব বলেছেন। ইসলাম ধর্মে কোরবানি একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

সামর্থ থাকার পরেও যদি কেউ কোরবানি না করেন তবে তার জন্য রয়েছে কঠিন তিরস্কার। কাছে মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। যে সকল মানুষের ওপর যাকাত ফরজ তাদের উপরই কোরবানি ওয়াজিব।

এর উদ্দেশ্য গোশত খাওয়া নয় বরং তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যই মূলত কোরবানি করা হয়। কোরবানি একমাত্র উৎসর্গ যেখানে যা উৎসর্গ করা হয় তা যার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয় সেটি সে ছুয়েও দেখেনা। আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর রক্ত চামড়া লোম কোন কিছুই পৌঁছায় না, পৌঁছায় কোরবানিকারীর মনের তাকওয়া।

কোরবানির ফযিলত ও গুরুত্ব

কোরবানিতে আমরা অনেকেই কোরবানি করে থাকি। পবিত্র কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক এর নৈকট্য হাসিল করা যায়। এবং পবিত্র কোরবানি দিয়ে অশেষ সওয়াব হাসিল করা যায়। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পশু জবাই নয়; জীবনের সর্বক্ষেত্রে খোদাভীতি ও প্রীতি অর্জনই মূল লক্ষ্য ।

কোরবানির বিনিময়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও অফুরন্ত প্রতিদান পাওয়া যায়। হযরত ইব্রাহিম (আ:) তার বৃদ্ধ বয়সে প্রাপ্ত সন্তানকে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। আবার তার পুত্র এটা জানার পরেও যে তাকে কোরবানী করা হবে সে পিঁছিয়ে আসেনি।

শুধুমাত্র পিতার ধর্ম রক্ষা এবং মহান আল্লাহর আদেশ সাধনের উদ্দেশ্যে। এটি পিতা-পুত্রের ত্যাগের এক মহৎ দৃষ্টান্ত। অনেক আলেমদের মতে এই দিনটি বছরের সর্বোত্তম দিন। এমনকি অনেক আলেমের দৃষ্টিতে এই দিনটি আরাফার দিনের চেয়ে উত্তম। ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন, 'আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন হলো কোরবানীর দিন, এটাই হলো হজ আকবরের দিন'।

কোরবানির তাৎপর্য ও শিক্ষা

কোরবানির ত্যাগ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাকওয়া অর্জন করা। আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় কোরবানি করে থাকি। মনের তাকওয়া অর্থাৎ অন্তরের সুপ্ত বাসনা কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত। আল্লাহর কাছে কোরবানির রক্ত, মাংস পৌঁছায় না।
মনের তাকওয়া পৌঁছায়। তাকওয়া অর্জনের জন্য অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সম্পূর্ণ খাঁটি মনে কোরবানি করতে হবে। বর্তমানে লোকদেখানো কোরবানি বেড়ে গেছে। কে কত বড় গরু কোরবানি করলো কে কত বড় ছাগল কোরবানি করলো এ নিয়ে রীতিমতো অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

তা কোরবানির মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে। লোকদেখানো ইবাদাত বন্দেগি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এতটাই নিষিদ্ধ যে এটাকে ছোট শিরকের সাথে তুলনা করা হয়। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় কোরবানি করলে তা কোরবানি বলে বিবেচিত হবে।

কোরবানি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি মাসয়ালা

কোরবানির গোসত যথাসম্ভব পরিমাপ করে সমানহারে বন্টন করে ভাগ করা উচিত এবং কর্তব্য। এটা অনুমান করে ভাগ করা উচিত নয়। যার যার ভাগের গোসতকে তিনি তিনভাগে বিভক্ত করে বন্টন করা এটি মুস্তাহাব। একভাগ নিজের জন্য,আরেকভাগ আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশী এবং আরেকভাগ গরীব-অভাবী ও দুঃখী মানুষদের জন্য ।

কোরবানির পশুর গোসত যারা প্রস্তুত করেন তাদেরকে বিনিময়ে কোরবানির গোসত বা ভুড়ি দেওয়া জায়েজ নয়। বিনিময়ে আপনি টাকা দিতে পারেন। অমুসলিমদেরকে কোরবানির গোসত দেওয়া যাবে এ নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেয়। কোরবানির গোসত ফ্রিজে রেখে খাওয়া যাবে এবং কতদিন রেখে খাবেন এটা একান্তই আপনার বেপার। এক্ষেত্রে শরীয়তে কোনো সীমা নির্ধারণ নেই।
  1. প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন শেখ মুসলিম নর নারী যাদের ওপর যাকাত ফরজ তাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার জন্য কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। নেসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমপরিমাণ সম্পদ বোঝায়।
  2. মোট তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়। জিলহজ মাসের ১০-১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানি করা যায় তবে ১০ তারিখ কোরবানি করা উত্তম।
  3. নাবালক শিশু কিশোর অথবা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয় এমন ব্যাক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের অভিভাবক নিজের সম্পদ থেকে কোরবানি করলে তা সহিহ হবে।
  4. যে ব্যাক্তি কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবেন। তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
  5. নাবালকের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া অভিভাবকের জন্য ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব।

লেখক এর শেষ কথা

আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও  কোরবানি অর্থ কি এই সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।

কোরবানি অর্থ কি নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। ইসলামিক, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url