গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় খাবারের পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন এ সময় উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন খাবার খেতে এবং বাইরের খাবার থেকে দূরে থাকতে। আজকের আর্টিকেলে গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়মগুলো জেনে নিব। আশা করি, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় - গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম

আপনি যদি কিছুক্ষন অপচয় করে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে, গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আশা করি, আমরা আপনাকে এমন কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব যার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় নারীদের খাদ্যাভাসে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। একজন গর্ভবতী মহিলা সঠিকভাবে জীবনধারণ এবং খাদ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে পারলে বিভিন্ন ঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতেন পারেন। এজন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিনিয়ত পুষ্টিসমৃদ্ধ বা সুষম খাবার খেতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য গ্রহণে পরামর্শ দিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যেগুলো ড্রাই ফ্রুটস রয়েছে সেগুলো খাওয়া এছাড়াও কিসমিস, কাজুবাদাম, বাদাম, আখরোট ইত্যাদি এসব খাবার গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রের বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে।

কারণ, এসব খাদ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। এছাড়াও খনিজ পদার্থ হিসেবে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ড্রাই ফ্রুটস অর্থাৎ খেজুর সম্পর্কে। এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলে গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় , গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম , সতর্কতা এবং খেজুর সম্পর্কিত আরো অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিব।

খেজুরের পুষ্টিগুন

আসুন আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিই। শুকনো খাবারের মধ্যে খেজুর হচ্ছে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ক্যালরি সমৃদ্ধ একটি ফল। কেননা এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন , বিভিন্ন ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও খনিজ উপাদান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম আয়রন পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য দিনে ১০০ গ্রাম বা ৪টা থেকে ৫টা খেজুর খাওয়া উত্তম। তাহলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের সন্তান উভয়েরই উপকারে আসবে।

গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়াটা নতুন নয় এটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ফলে ইউটেরাস এর সংবেদনশীলতা হ্রাস পায় এবং তাকে শক্তিশালী করে তোলে এক্ষেত্রে প্রসব ব্যথাটা অনেকটাই কমে যায়। চলুন এবার জেনে নেই গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি কি উপকার হয়।
প্রসব বেদনা কমায়: খেজুরে কিছু উপকারী ফ্যাটি এসিডের উপাদান রয়েছে যা সন্তান প্রসবের সময় সারভাইক্যাল মাসল ফেলিক্সিবল এবং নমনীয় করে যার ফলে প্রসব বেদনা অনেক কম অনুভূত হয়।

রক্ত উৎপাদন করে: একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক পরিমাণে রক্ত বের হয়। এক্ষেত্রে মায়ের শরীর অনেক দুর্বলতার সম্মুখীন হয়। গর্ভকালীন সময় এবং প্রসবের পরে নিয়মিত খেজুর খেজুর খেলে তা শরীরে অনেক দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে।

অধিক শক্তি যোগায়: একজন গর্ভবতী মহিলার সন্তান প্রসবের পূর্বে এবং প্রসবের সময় অধিক পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। খেজুরের প্রচুর পরিমাণে নিউট্রিয়েন্টস থাকে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেতে পারলে গর্ভবতী মায়ের শক্তির মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সন্ধান প্রসবের সময় বাড়তি যে শক্তির যোগান সে অতি সহজে দিতে পারবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় প্রতিটা খাদ্য নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। তবে খেজুরের ক্ষেত্রে যেসব খেজুর উচ্চ রাসায়নিক সমৃদ্ধ সেগুলো খেজুর গর্ভাবস্থায় কখনোই খাওয়া উচিত নয়। খেজুর যদি আপনার খুব বেশি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে দিনে ২ থেকে ৩টির বেশি খেজুর খাবেন না। দিনের যেকোনো সময়ে আপনি খেজুর খাইতে পারবেন।
তবে সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি সকালের খাবার খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর দুইটি অথবা তিনটি খেজুর খেতে পারেন। কিন্তু গর্ভবতী মহিলার যদি কোন ধরনের রোগ যেমন এলার্জি অথবা ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি দিনে কয়টি খেজুর খেতে পারবেন সেই বিষয়ে জেনে খেজুর খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় আপনি কি পরিমান খেজুর খাচ্ছেন সেই বিষয়ে আপনাকে যত্নবান হতে হবে। কথায় আছে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। এজন্য অতিমাত্রায় খেজুর খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।আপনাকে অবশ্যই তাজা খেজুর খেতে হবে।

চিকিৎসকরা সুপারিশ করেন যে গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের ডায়েটে খেজুর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য আপনাকে ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিতে হবে। একজন চিকিৎসক আপনাকে অফার করবে জৈব খেজুরগুলি খেতে। কেননা, এগুলোতে রাসায়নিক প্রিজারভেটিভমুক্ত হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কখন খেজুর খাওয়ার শুরু করবেন

প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের একটি সাধারণ প্রশ্ন থাকে সেটি হচ্ছে গর্ভাবস্থায় আমি কখন খেজুর খাওয়া শুরু করব। প্রথম ত্রৈমাসিকে খেজুর খাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সময়ের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যতা একটি বড় ধরনের সমস্যা। স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের গতিবিধি ও অভ্যন্তরীণ যেকোনো অস্বস্তি দূর করতে খেজুর খেতে পারেন।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সময় খেজুর খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এ সময়ে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অবশ্যই আপনি আপনার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন এরপরে আপনি খেতে পারবেন কেননা স্বল্প পরিমাণে খেজুর খাওয়ার ফলে কোনও ক্ষতি হয় না।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে খেজুর খাচ্ছেন এই বিষয়টি আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এটি একটি প্রাকৃতিক রেচক বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে সংকোচনের সহায়তায় প্রসব শ্রম অনেক কমিয়ে দেয় এবং প্রসব প্রক্রিয়াটিকে অনেক সহজ ও স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রসবের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রসবের তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন ছয়টি করে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এতে আপনার অনেক উপকারে আসবে।

লেখকের শেষকথা

গর্ভাবস্থায় সঠিক নিয়মে খেজুর খাওয়ার ফলে এর উপকারিতা সহজেই পাওয়া যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি এই বিষয়ে অল্প কিছু হলেও গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম এই সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এই বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

গর্ভবতী মহিলা খেজুর খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নিয়ম নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url