গুগল ম্যাপের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল ২০২৪

বর্তমানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চাইলেও কাউকে কোন স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে হয় না কারণ, স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে অতি সহজেই রাস্তার ম্যাপ, লোকেশন ম্যাপ ইত্যাদি বের করা যায়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা গুগল ম্যাপের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল সম্পর্কে জেনে নিব।
গুগল ম্যাপের সর্বাধিক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল
গুগল ম্যাপ আমাদের বাংলাদেশ অনেক জনপ্রিয় একটি এপ্লিকেশন। কিন্তু, এর ব্যবহারের দিক দিয়ে এই দেশ কিন্তু অনেক পিছিয়ে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানি না। তাই আসুন, গুগল ম্যাপের সর্বাধিক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ

উপস্থাপনা

আমরা যেকোনো অচেনা জায়গায় যায় না কেন গুগল ম্যাপে সার্চ করলে সাথে সাথে আমাদের সামনে হাজির হয়ে যায়। এছাড়াও একই স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে কতক্ষণ সময় লাগে, সামনের রাস্তায় কেমন যানজট রয়েছে, কিভাবে যেতে হবে, আমার বর্তমান লোকেশন কিংবা আমি এখন কোন জায়গায় আছি ইত্যাদি সবকিছু দেখিয়ে দেয়।

আপনি যদি গুগল ম্যাপের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল সম্পর্কে জেনে না থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আশা করছি, এই সম্পর্কে জেনে আপনি উপকৃত হবেন। তাই চলুন, আর দেরি না শুরু করা যাক।

ইন্টারনেট ব্যবহার না করেই গুগল ম্যাপ চালাবেন যেভাবে

ধরুন, আপনি কোন একটি নতুন জায়গায় বেড়াতে গিয়েছেন। কিন্তু, সেখানকার রাস্তাঘাট আপনি চেনেন না। এই মুহূর্তে আপনার মাথায় খেয়াল আসবে যে আমি একটা গুগল ম্যাপের সাহায্যে সঠিক ডিরেকশনটা জেনে নেই। কিন্তু আপনার স্মার্টফোনে নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে আপনি কি করবেন?
আপনি যদি গুগল ম্যাপের সঠিক ব্যবহার জেনে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহার না করেই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি যে জায়গায় বেড়াতে যাবেন সেই এলাকার ম্যাপ আগে থেকেই ডাউনলোড করে রাখতে পারলে আপনার জন্য বেশি সুবিধা হবে।

পরিবারের সাথে কোথাও টুরে গেলে আপনি অবশ্যই সেই এলাকার লোকেশন ম্যাপে ডাউনলোড করে নিবেন। তাহলে এটি আপনার বিপদ-আপদে অনেক কাজে আসবে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে গুগল ম্যাপে প্রবেশ করে "Offline maps" অপশনে গিয়ে "Select your own map" ডাউনলোড করে নিবেন।

বিশেষত, ঢাকা শহরে গুগল ম্যাপের ব্যবহার বেশি প্রয়োজন।কেননা, বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন না যে আমি অনেকবারই ঢাকা শহরে গিয়েছি কিন্তু এখনো ভালোভাবে রাস্তাঘাট চিনতে পারি না। মনে হয় একই রাস্তায় বারবার ঘুরে আসছি। আপনি অচেনা গলিতে কখন যে হারিয়ে যাবেন আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন না।

এজন্য কোনো অচেনা জায়গায় গেলে অবশ্যই সেই এলাকার ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখবেন কারণ বিপদ কখনই বলে আসে না। আপনার ফোনে হয়তো মেগাবাইট রয়েছে কিন্তু নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যার কারণে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন নাও চলতে পারে। আশা করি, এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে সহজেই ট্রাফিক জ্যামের অবস্থা জানা

আপনি যদি ঘরে বসে যে কোন রাস্তার যানজটের বর্তমান অবস্থা জানতে পারেন তাহলে আপনার এই বিষয়টি কেমন লাগবে? আপনি যখন জরুরি কোন কাজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে চাইবেন, সেই স্থানে যাওয়ার কয়েকটি রাস্তা বা মাধ্যম রয়েছে সেক্ষেত্রে যদি আপনি ঘরে বসেই সে কয়েকটি রাস্তার যানজটের বর্তমান অবস্থা জানতে পারেন।
তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য অনেক উপকারী হবে। গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে লাইভ ট্রাফিক আপডেট (Live Traffic Update) ফিচারটির মাধ্যমে আপনি রাস্তায় যানজট নাকি ফাঁকা রয়েছে? সেটি জানতে পারবেন। তাহলে আসুন, গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে কিভাবে এই সুযোগটি পাবো সে বিষয়ে জেনে নিই।

এই গুরুত্বপূর্ণ ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে প্রথমে আপনার ডিভাইস থেকে গুগল ম্যাপের মেনু বার থেকে রিয়েল টাইম ট্রাফিক (Real time traffic) অপশন ক্লিক করতে হবে। তবে গুগল ম্যাপের বর্তমান আপডেটের পরে এই ফিচারটি ব্যবহার করা আরো সহজ হয়েছে।

এখন গুগল ম্যাপে ডিরেকশন অপশনে গিয়ে আপনি কোন স্থান থেকে কোন স্থানে যেতে চান তা সেট করে দেওয়ার পরে লাল চিহ্নিত স্থানে তুলনামূলক যানজট বেশি এবং হলুদ চিহ্নিত স্থানে তুলামানোর যানজট কম রয়েছে। গুগল ম্যাপ আপনাকে রাস্তার বর্তমান যানজট অবস্থা বা পরিস্থিতি কেমন সেই সম্পর্কে এভাবে বুঝে নিতে পারবেন।

বর্তমানে গুগল ম্যাপে এই ফিচারটি মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ফিচারটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ হচ্ছে আপনি নিজে ব্যবহার করলে তা বুঝতে পারবেন। কেননা এটি জরুরী পর্যায়ে রাস্তায় যানজটের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য আমাদের অনেক উপকারী একটি ফিচার।

গুগল মাপ ব্যবহার করে যেকোনো জায়গার দূরত্ব বের করা

এখন গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে যেকোনো জায়গায় দূরত্ব পরিমাপ করা যায়। যেমন আপনার জানতে ইচ্ছে করছে যে, রাজশাহী থেকে ঢাকা এর দূরত্ব কত কিলোমিটার অথবা আপনার বর্তমান বাড়ি থেকে অমুক জায়গা দূরত্ব কত? এটা যদি আপনি স্বাভাবিক ভাবে কেউকে মাপ নিতে যান, তাহলে সঠিক পরিমাপ পেতে আপনার অনেক দিন সময় লেগে যাবে।

শুনলে হয়তো অবাক হবেন গুগল ম্যাপের সাহায্যে আপনি মুহূর্তের মধ্যেই যে কোন জায়গা দূরত্ব জানতে পারবেন। তবে সেজন্য আপনাকে অবশ্যই গুগল ম্যাপের সঠিক ব্যবহার জানা জরুরী।
  • প্রথমে গুগল ম্যাপে প্রবেশ করে ডেস্টিনেশন (Destination) অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর Starting Point-এ রাজশাহী এবং Destination point-এ ঢাকা লিখে দিলে গুগল ম্যাপ আপনাকে রাজশাহী থেকে ঢাকার দূরত্ব মেপে দিবে।
  • গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে দূরত্ব পরিমাপের পাশাপাশি সেই স্থানে যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে সমস্ত কিছু জেনে নিতে পারবেন।
এভাবে আপনি গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে স্টার্টিং পয়েন্ট এবং ডেসটিনিশন পয়েন্ট বসিয়ে বাংলাদেশের যেকোনো অবস্থা জায়গার দূরত্ব পরিমাপ করতে পারবেন। আশা করছি, গুগল ম্যাপ ব্যবহারের এই গুরুত্বপূর্ণ কৌশলটি আপনি জেনে উপকৃত হবেন।

গুগল মাপে নিজের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংযুক্ত করা

গুগল ম্যাপে নিজের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংযুক্ত করা ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে এটি অনেক কার্যকরী। যারা নতুন ব্যবসায়ী রয়েছেন তারা গুগল ম্যাপে নিজের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংযুক্ত করে তারা ব্যবসায় উন্নতি করতে পারবেন।

কোনো ব্যক্তি যদি আপনার প্রতিষ্ঠান কোন স্থানে রয়েছে বা কিভাবে সেখানে যেতে হবে সেই বিষয়ে যদি গুগল ম্যাপে সার্চ করে থাকে তাহলে সহজেই আপনার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা খুঁজে বের করতে পারবে। এছাড়াও গুগল ম্যাপে নিজের দোকান বা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংযুক্ত করার ফলে তাহলে এর মাধ্যমে এটি ব্র্যান্ডিং-এ সহায়তা করবে।

এরপর, আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে কি কি সেবা প্রদান করেন সে বিষয় সংযুক্ত করে দিতে পারবেন এবং সকল প্রকার যোগাযোগের ঠিকানা ও আপনার ওয়েবসাইট যুক্ত করে দিতে পারবেন। সুতরাং গুগল ম্যাপের সর্বাধিক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারের কৌশলের মধ্যে এই কৌশলটি বেশ কার্যকর।

গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে লোকেশন শেয়ার করবেন যেভাবে

গুগল ম্যাপের সাহায্যে আপনার বর্তমান অবস্থান বা লোকেশন পরিচিতদেরকে জানিয়ে দিতে পারবেন। গুগল ম্যাপে এই ফিচারটি চালু হওয়ার পর অনেকের নিরাপত্তা মূলক ব্যবহারকারীর বেশ সুবিধা হচ্ছে। আবার আপনার কোন আত্মীয়-স্বজন যদি আপনার বাড়ির ঠিকানা জেনে না থাকে তাহলে আপনি সহজেই গুগোল ম্যাপে সাহায্যে লোকেশন শেয়ার ফিচারের মাধ্যমে তাদেরকে সহজেই আপনার বর্তমান লোকেশন জানিয়ে দিতে পারবেন।

গুগল ম্যাপ এর এই ফিচারটি সময় উপযোগী এবং অনেক প্রয়োজনীয়। এই ফিচারটি ব্যবহার করতে হলে প্রথমে গুগল ম্যাপস চালু করে অপরের ঠিক ডান পাশের আইকনে ক্লিক করতে হবে। এরপর লোকেশন শেয়ারিং (Location Sharing) অপশনে যেতে হবে। এ পর্যায়ে ঠিক কত সময়ের জন্য আপনার লোকেশন শেয়ার করতে চান সেটা নির্ধারণ করতে হবে।

এরপর "Until you turn this off" এটি সিলেক্ট করলে বন্ধ করা না পর্যন্ত লোকেশন শেয়ারিং ফিচারটি চালু থাকবে। এবার আপনার পরিচিত যার সাথে লোকেশন শেয়ার করতে চান সেটা সিলেক্ট করার পরে শেয়ার অপশনে ক্লিক করুন। তাহলেই লোকেশন শেয়ারিং হয়ে যাবে। এটি সাধারণত জিপিএস ব্যবহার করে লোকেশন শেয়ার করে।

আপনি যে ব্যক্তিকে লোকেশন শেয়ার করেছেন, তিনি গুগল ম্যাপ চালু করলে আপনার বর্তমান অবস্থান দেখতে পাবে। আবার, আপনি চাইলে ইচ্ছামত যেকোনো সময় লোকেশন শেয়ারিং অপশনটি বন্ধ করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে লোকেশন শেয়ারিং মেনু থেকে যার সাথে লোকেশন শেয়ার করেছেন তার নামের পাশে "X" অপশনে ক্লিক করলে বন্ধ হয়ে যাবে। আশা করছি, এ বিষয়টি আপনি পরিপূর্ণভাবে জানতে সক্ষম হয়েছেন।

শেষকথাঃ গুগল ম্যাপের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল

আশা করছি, এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অল্প কিছু হলেও গুগল ম্যাপের সর্বাধিক ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল এই সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ বিষয়ে আপনাদের মাঝে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে বা কোথাও যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ইনশাআল্লাহ সমাধান দেয়ার অবশ্যই চেষ্টা করব।

গুগল ম্যাপের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবহারের কৌশল এই বিষয় নিয়ে লেখা আমাদের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url