আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা - আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমরা আলকুশি বীজ সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য আপনাকে দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করছি, আপনি আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা, আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবেন।
আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা - আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম
আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকেন তাহলে, আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন, আর দেরি না করে আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুগুলো পেজ সূচিপত্রতে একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ

ভূমিকা

আলকুশি বীজ মধ্য আমেরিকাগুলোতে কফির বিকল্প হিসেবে এটি আগুনে ভেজে চূর্ণ করে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই আলকুশি বীজ আমাশয়, উদ্যোগ, সাপের কামড় এবং বন্ধত্বের চিকিৎসায় মেডিসিন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও আলকুশি বীজ ডায়াবেটিস, নির্যাস কাশি এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও সহায়তা করে।

প্রিয় বন্ধুগণ, আজকের আর্টিকেলে আমরা আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়মসহ আলকুশি সম্পর্কে আর অন্যান্য বিষয় বিস্তারিতভাবে জেনে নিব। আশা করছি, এই সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আসুন, আর দেরি না করে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

আলকুশি বীজের পরিচিতি

আলকুশি হচ্ছে শিম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। আলকুশি গাছ সাধারণত বিভিন্ন লোকালয়ে ও ঝোপঝাড়ে বছরের পর বছর জন্মাই। আলকুশি এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Valvet bean ও বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Mucuna pruriens । এই ফলটা দেখতে অনেকটা শিমের মতো। আলকুশি বীজগুলো অতি সহজে পৃথক হয়ে যায় কারণ, এতে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোমদ্বারা আবৃত থাকে। প্রতি ৫০ গ্রাম শুকনো বীজের ওজন প্রায় ২৭-৪৩ গ্রাম। আলকুশি গাছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে শিম ফুলের মতো লালচে বেগুনি ফুল ফোটে।

আলকুশির পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা

আসুন, আমরা আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নেওয়ার পূর্বে আলকুশির পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা সংক্ষেপে জেনে নিই। আলকুশি বীজ ও পাউডারের পাশাপাশি আলকুশির পাতা ও শিকড়েও এর অনেক উপকারিতা। আলকুশি পাতার রস ফোঁড়া ফেটে যেতে এবং পুজ বের করতে সাহায্য করে।
যার ফলে ফোঁড়ার ব্যাথা অতি শীঘ্রই নিরাময় হয়ে যায়। আবার এর শিকড়ের রস সর্দি- কাশি এবং জ্বর ভালো করে। তাছাড়াও আলকুশি শিকড়ের ভেতরে যে নরম অংশ রয়েছে সেগুলো যৌনাঙ্গের এবং মূত্রবোধক নিরাময়ের জন্য অনেক উপকারী। সুতরাং আলকুশির বীজ ও পাউডার থেকে শুরু করে পাতা ও শিকড়েরও উপকারিতা অনেক বেশি।

আলকুশি বীজের উপকারিতা কি

আলকুশি এই প্রাচীনকাল থেকে আমাশয়, উদ্বেগ, সাপের কামড় এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও আলকুশি বীজের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে: বন্ধুত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে অস্বাভাবিক ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন, প্রোল্যাকটিন এবং কম টেস্টোস্টেরন। আলকুশি বীজ খেলে প্রোল্যাকটিন কমতে পারে অতএব এটি মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে সাহায্য করে।

যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়: আলকুশি বীজ দেহের প্রজনন ক্ষমতাকে উন্নত করে। আলকুশি বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালয়েড রয়েছে যা আপনার শুক্রাণু কার্যক্ষমতা, গতিশীলতা এবং শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

কলেরা দূরীকরণে: আলকুশি বীজ হালকা গুড়া করে মধু দিয়ে খেলে অনেক পেটব্যথা জনিত সমস্যা বা কলেরা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অর্থাৎ কলেরা দূর করতে আলকুশি বীজ ভূমিকা পালন করে।
শরীরের সক্ষমতা উন্নতি: মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ ঝিন ঝিন করা, অসাড় হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয়টি বীজ হালকা গুড়া করে ছাগল দুধে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে অনেক উন্নতি পাওয়া যায়। এর শিকড়ের রস নিয়মিত এক সপ্তাহ খেলে আমাশয় সেরে যায়।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করে: আলকুশি বীজ দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে বাতের সমস্যা দূর করে এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর করতেও ভূমিকা পালন করে। আবার এটি বুকে জমে থাকা কফ সারাতেও অনেক কার্যকরী।

ফোঁড়ার সমস্যা দূরীকরণে: যারা ফোড়াজনিত সমস্যাই কষ্ট পান তারা যদি আলকুশির পাতার রস ব্যবহার করে তাহলে ফোঁড়া ফেটে যায় যার ফলে ব্যথা অনেকটাই নিরাময় হয়ে যায়।

আলকুশি বীজের অপকারিতা কি

সকল খাবারগুলো সামঞ্জস্য বজায় রেখে পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। প্রতিটা খাদ্যদ্রব্যে উপকারিতার পাশাপাশি অতিরিক্ত বা অতিমাত্রায় খেলে সামান্য কিছু অপকারিতাও থাকে। আলকুশি বীজের অপকারিতা হচ্ছে-
  • আলকুশি বীজ অতিমাত্রায় খেলে যে প্রাথমিক সমস্যাগুলি হতে পারে যেমন বমি বমি ভাব হওয়া, চুলকানি জনিত ত্বকের সমস্যা হতে পারে এবং পানিবাহিত বা ডায়রিয়া রোগ হতে পারে।
  • আবার, আলকুশি বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। তাই এটি অতিমাত্রায় খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • আলকুশি বীজের মধ্যে অক্সালেট রয়েছে যা অতিমাত্রায় খাওয়ার ফলে মানবদেহের তো কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
  • এছাড়াও আলকুশি বীজ খেলে অতিরিক্ত খেলে পাকস্থলী জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপরোক্ত যে সকল অপকারিতা বা সমস্যার কথা বলা হয়েছে সেগুলো সমস্যা যদি আপনার শরীরে দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম

আলকুশি বীজ খাওয়ার কিছু সঠিক নিয়মাবলী রয়েছে যেগুলো আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। সময় এবং পরিমাপ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করে আলকুশি বীজ খাওয়া উত্তম। এবার আসুন, আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
  • আলকুশি বীজ প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ খাওয়া উচিত। অর্থাৎ এক চা চামচ এর চেয়ে বেশি খাওয়া ঠিক হবে না।
  • আপনার শরীরের কোন খারাপ বাচন শক্তি বিদ্যমান থাকলে আলকুশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • আলকুশি বীজের সাহায্যে ওজন কমাতে চাইলে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
  • এছাড়াও আলকুশি মসলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস এবং গর্ভাবস্থায় আলকুশি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাওয়া উচিত হবে।

আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ

প্রথমত আলকুশি বীজে ফেনল, ট্যানিন ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে এজন্য এটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে শোধন করে নিতে হবে। আলকুশির মধ্যে বিদ্যমান লিভোডোপা সিরাম লিভারের মধ্যে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। এজন্য, লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলকুশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

আবার অধিক পরিমাণে আলকুশি খেলে বেশি মাত্রার এল-ডোপা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে হ্যালুসিনেশন, ফলস্বরূপ, সিজোফ্রেনিয়ার কত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যাদের নিউরোপ্যাথি এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের চিকিৎসা অবস্থায় রয়েছেন তাদের অবশ্যই এই বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভকালীন সময়ে আলকুশি বীজ খাওয়াটা খুব একটা নিরাপদ হবেনা। কেননা আলকুশি বীজে জরায়ু উদ্দীপকের প্রভাব রয়েছে যার ফলে জরায়ু ফেটে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলকুশি বীজ  খাওয়ার ফলে জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিতে পারে। সুতরাং গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এই বীজ খাওয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে।

আলকুশি বীজের ছবি

আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা

আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা

শেষকথা: আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা - আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলে আলকুশি বীজের পরিচিতি, আলকুশির পাতা ও শিকড়ের উপকারিতা, আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা, আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম এবং আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করি আপনারা এ সকল বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছেন। এরপরেও যদি আপনার এই বিষয়ে কোন মতামত বা কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এরকম আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে তোমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।

আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ কষ্ট করে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url