ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় জানুন

প্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা কি ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় সেটি জানেন? যদি এই বিষয়ে অবগত না থাকে তাহলে আমাদের এই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। কারণ, ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় তার বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি, পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়
ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় অথবা এই রোগের চিকিৎসার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজকের আর্টিকেলে ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়, ওসিডি রোগের চিকিৎসা বা প্রতিকার, ওসিডি রোগের লক্ষণ কি, ওসিডি রোগের কারণ কি, ওসিডি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ

ওসিডি (OCD) কি | What is OCD?

ওসিডি (OCD) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Obsessive Compulsive Disorder যার বাংলা অর্থ হচ্ছে শুচিবাই। এই রোগে মনের ভিতরে বার বার একই চিন্তা আসতে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে অধিক মানুষ এই রোগে ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্ত রোগী বুঝতে পারে যে এটি অযৌক্তিক কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই একই চিন্তা নিবারণ করতে পারেন না।

ওসিডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একটা সময় যে ব্যাপকভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। ওসিডি রোগীরা একপর্যায়ে যেয়ে মানসিক রোগীতে রূপান্তরিত হয়। এই সমস্যায় থাকা বা আক্রান্ত রোগী যুক্তিহীন অবসেশন এবং একটি কম্পালসিভ বিহেভিয়ারের চক্রের মধ্যে আটকে থাকেন।

ওসিডি পুরুষ, নারী কিংবা শিশু যে কারোরই হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়সন্ধিকাল ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ওসিডি এর লক্ষণ দেখা যায়। আসন আমরা সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোসা ফাতেমা জোহরার কাছ থেকে এই রোগের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও এই রোগ সম্পর্কিত আরো তথ্য জেনে নেই।

ওসিডি রোগের লক্ষণ কি | What are the symptoms of OCD?

ওসিডি এর লক্ষণ গুলো বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-
  • কাপড়ে, আসবাবপত্রে এবং শরীরে ময়লা বা জীবাণু লেগে আছে এমন চিন্তা বারবার মনে আসে।
  • অন্যের বা নিজের ক্ষতি হতে পারে এমন ভাবনা বা ভীতিকর চিন্তা আসা।
  • একটু পরপর এক কাজ বারবার করা। যেমন- অন্য রুমের লাইট বন্ধ করা হলো কিনা বা দরজা জানালা ঠিকভাবে লাগানো হলো কিনা এ ধরনের চিন্তাভাবনা বারবার করা।
  • জীবাণু ও দূষণের ভয়ে একটু পরপর শুধু হাত-পা ধুয়ে পরিষ্কার করা।
  • বারবার কাউকে আঘাত করতে যাওয়া অর্থাৎ মনের ভেতরে আগ্রসী মনোভাব আসে।
  • কোন কিছু মনের ভিতর সঠিকভাবে সাজাতে না পারলে অস্থিরতার মধ্যে ভোগে এগুলোই সাধারণত ওসিডি রোগের মূল লক্ষণ।

ওসিডি রোগের কারণ কি | What causes of OCD?

ওসিডি এই রোগের লক্ষণ খুব একটা স্পষ্ট নয়। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যেমন পরিবার প্রজন্ম অর্থাৎ জন্মগত প্রজন্মের কারণে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। আবার, ডোপামিন বা সেরোটেনিন এর তারতম্য কারনে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও অতিমাত্রায় মাদক সেবনেও এই  ওসিডি বা শুচিবাই রোগের দ্বিতীয় কারণ হতে পারে। আশা করছি, ওসিডি রোগের কারণগুলো জানতে পেরেছেন। এবার আসুন, আমরা ওসিডি রোগের চিকিৎসা বা এই রোগের প্রতিকার জেনে নেই।

ওসিডি রোগের চিকিৎসা বা প্রতিকার | Treatment of OCD

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এর মত রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকা যায় তেমনি এই ওসিডি বা শুচিবাই রোগটিকেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। এ রোগের চিকিৎসা সাধারণত দুটি মাধ্যম প্রয়োগ করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
ফার্মাকোলজিক্যাল (Pharmacological): ফার্মাকোলজিক্যাল চিকিৎসা বলতে মেডিসিন বা ফার্মাকো থেরাপি দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা। সাধারণত এন্টি ডিপ্রেশন (Anti depression) এই রোগীদের ক্ষেত্রে খুব কাজে আসে। এই রোগীদের ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এর পাশাপাশি অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (Anxiety disorders) থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু অসৎ সেবন করলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

সাইকোলজিক্যাল (Psychological): সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি (Cognitive behavior therapy)। এই থেরাপিতে সাধারণত রোগীদের ভুল চিন্তা ভাবনাগুলোর উপর কাজ করে। বিশেষত, দৃঢ় বিশ্বাস এবং নেতিবাচক চিন্তা গুলোকে পূর্ণগঠন করাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও মৌলিক ভাবে এই রোগের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, যেমন রোগীকে বারবার হাত ধোয়ার থেকে বিরত রাখার নিয়মিত অনুশীলন করাতে হবে। তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করাতে হলে এই বিষয়টি অতীব জরুরী। আবার, নিজের অস্বাভাবিকতা ওসিডি রোগীকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে এবং রোগীকে তার বয়স সাপেক্ষে সামাজিকভাবে ব্যস্ত হবে রাখতে হবে।

ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় | How long do you need to take OCD medicine?

ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এটি একজন ওসিডি রোগীর জেনে নেওয়া অনেক জরুরি। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী Flvuoxamin, Sertalline, Fluoxetine ইত্যাদি মেডিসিনগুলো  উচ্চ ডোজে দেওয়া লাগবে।

কেননা বিষণ্ণতার প্রতিরোধই ঔষধ ধীরে ধীরে উচ্চমাত্রায় না দিলে এর লক্ষণ (Obession) কোনোভাবেই কমবে না। সুতরাং ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এ প্রশ্নের জবাবে ডাক্তার মোসা ফাতেমা জোহরার পরামর্শ অনুযায়ী যতদিন না এ রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো হয় ততদিন ডোজ এর কার্যক্রম বহাল রাখাটাই ভালো।
কারণ এই রোগের ওষুধ বাদ দিলে এই রোগ পুনরায় আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত মেডিসিন খেতে হবে। ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ওষুধ কত দিন খেতে হয় তা ভালোভাবে চিকিৎসকের কাছে শুনে নিয়ে সেই অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া ভাল।

আর সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হচ্ছে, রোগীর বয়স অনুযায়ী সামাজিকভাবে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। তাহলে যে উপকারটা হবে সেটি হচ্ছে সে যত মানুষের মধ্যে শামিল হয়ে থাকবে এই রোগ থেকে তত তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে। আশা করছি আপনি এ বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছেন।

ওসিডি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ | Some suggestions for OCD sufferers

ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে আপনারা ধারণা পেয়েছেন। এবার আমরা জানাবো, ওসিডি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ বা ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় সমূহ।
  • নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম ঠিকঠাক থাকতে হবে। অ্যালকোহল ও নিকোটিন অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
  • মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে রিলাক্সেশন টেকনিক অভ্যাস করা।
  • ওসিডি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। এজন্য নিজেকে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। অন্যান্য ১০ জনের মত স্বাভাবিক জীবনযাপনের মতো কল্পনা করে সে কল্পনা অনুযায়ী অনুসরণ করে চলতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এই বিষয়টা পরিহার করা জরুরী। এক হাদিসে উল্লেখ আছে, মানুষ হিসেবে যতটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই অনুসরণ করতে হবে।
  • যদি একটানা ৬ মাস নিয়মিত চিকিৎসা করা যায়, তাহলে অনেককেই পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তবে কারো কারো ভালো হয়ে যাওয়ার অনেকদিন পর পুনরায় এই রোগটি আগের রূপে ফিরে আসে। এজন্য তাদেরকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাভাবিক থাকতে হবে।
  • কেউ যদি এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেয় তাহলে তা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের মতামত গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।ক

শেষ কথাঃ ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলে ওসিডি কি, ওসিডি রোগের লক্ষণ কি, ওসিডি রোগের চিকিৎসা বা প্রতিকার, ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এবং ওসিডি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ বা ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আশা করছি আপনারা এ সকল বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে জানতে পেরেছেন। এরপরেও যদি আপনার এই বিষয়ে কোন মতামত বা কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এরকম আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল পড়তে তোমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।

ওসিডি বা শুচিবাই রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়? এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকলে কমেন্ট ও আপনার পরিচিতদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ কষ্ট করে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url